চাকরি সম্পর্কে ১০টি অসত্য ভ্রান্ত ধারণা চলুন জেনে নি
আমাদের সমাজে সরকারি চাকরি নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বিরাজ করতেছে । আসল সত্য অনেকে আমরা জানিনা । মনে করি একটা সরকারি চাকরি ই যথেষ্ট । সরকারি চাকরি থাকলেই জীবন সফল কিন্তু বাস্তবে এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়চাকরি ই একমাত্র সফলতা নয় ।
আবার আমরা মনে করি বেসরকারি চাকরিতে কোনো নিরাপত্তা নাই । সরকারি চাকরিকে সবার উর্ধে মনে করি । এই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙ্গা খুবই জুরুরী । এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের ভ্রান্ত ধারণা কেটে যাবে আশা করি । চলুন আজকে আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।পেজ সুচিপত্র ঃ চাকরি সম্পর্কে ১০টি অসত্য ভ্রান্ত ধারণা চলুন জেনে নি
- সরকারি চাকরি মানেই সফলতা
- চাকরি মানে সারাজীবন নিশ্চিন্ত
- চাকরি পেতে শুধু সুপারিশ লাগে
- চাকরি পেতে ভালো ফলাফলই যথেষ্ট
- বিদেশে চাকরি পেলেই জীবন সেট হয়ে যাবে
- চাকরি মানে শুধু মাসিক বেতন পাওয়া
- চাকরি করার পর পড়াশোনার দরকার হয় না
- বেসরকারি চাকরিতে কোনো নিরাপত্তা নেই
- চাকরি না করলে জীবনে সফল হওয়া যায় না
- পরিশেষে কিছু কথা
সরকারি চাকরি মানেই সফলতা
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা যা শুনে আসতেছি বা দেখে আসতেছি ছোট বেলা থেকে তা হলো অমুক সরকারি চাকরি করে তমুক সরকারি চাকরি পাইছে । রহিমের ছেলে সরকারি চাকরি পাইছে যাক ছেলেটার জীবনে আর কিছু লাগবে না জিবনে আর কোনো চিন্তা নাই । এ ধরনের কথা শুনে শুনে আমরা অভ্যস্ত । আমরা মনে করি সরকারি চাকরি ছাড়া জীবনে লাভমান হওয়া যাবে না উন্নতি সাধন হবে না । অবসর সময়ে পেনশন পাওয়া যাবে তাহলে আর কি লাগবে । সরকারি চাকরি মানেই আসলে সফলতা নয় । আসল বাস্তবতা হলো এমন কিছু বেসরকারি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যাংক , এনজিও চাকরি সরকারি চাকরির থেকেও বেশি বেতন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে । ক্যারিয়ার গ্রোথ করে জীবনে অনেক দূর এগানো সম্ভব । তাহলে আপনি যদি সরকারি চাকরি পান অথবা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করলে এই মহা সুযোগ হারাবেন ।
চাকরি মানে সারাজীবন নিশ্চিন্ত
আমরা অনেকেই মনে করি চাকরি মানেই সারাজীবন নিশ্চিন্ত । কোনো চিন্তা থাকবে না সারাজীবন ভালোভাবেই কেটে যাবে । আর কোনো কিছুই প্রয়োজন নাই । কিন্তু আপনাকে ভাবতে হবে চাকরি মানেই অন্যের কথা শুনতে হবে । আপনি যে প্রতিষ্ঠানের চাকরি করবেন সেই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে । নিজের কর্মদক্ষতাকে প্রমাণ করায় দিতে হবে । আপনি যদি চাকরি ধরে রাখতে চান তাহলে সবার মন যোগী আপনাকে থাকতে হবে । নিয়ম-নীতি মেনে সারা জীবন আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে । অনেকে মনে করেন চাকরিটা পেয়ে গেছি জীবনে আর কিছু লাগবে না কিন্তু দেখা যায় মাছ পর থেকে অনেক এখান থেকে সরে আসে চাকরিটা ধরে রাখতে পারেনা । সেজন্য আপনি চাকরি পাওয়া মাত্রই পড়াশোনা ছেড়ে দিবেন দিয়ে সারাজীবন নিশ্চিন্ত থাকবেন এটা সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে ।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে ১০ টি ব্যাবসা শুরু করবেন?
চাকরি পেতে শুধু সুপারিশ লাগে
বর্তমান সমাজে আমরা প্রায় ই শুনে থাকি এই ব্যাক্তির চাকরি হয়নি কারণ ওকে সুপারিশ করার মতো কেউ নাই অর্থাৎ আত্মীয় স্বজন কেউ নাই তাই চাকরি হয়নি । চাকরি পেতে শুধু সুপারিশ লাগে তাছাড়া চাকরি হবে না । তবে বাংলাদেশে কিছু জায়গায় এরকম সমস্যা থাকে । কিন্তু বেশিরভাগ দেখে আপনার মেধা । পরীক্ষার মাধ্যমে একজন যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয় । পরীক্ষায় খারাপ করলে সুপারিশ করলেও পরীক্ষার রেজাল্ট দেখানো হয় । এই অবস্থায় সুপারিশ দিয়ে সরকারি চাকরি পাওয়া অসম্ভব । শুধু সরকারি চাকরি না বেশ কিছু বেসরকারি চাকরি নিতে গেলেও মেধা যাচাই করে । তারা চাই একজন মেধাবী যোগ্য প্রার্থী বেচে নিতে । মানুষের মুখে মুখে চাকরির বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা থাকলেও বাস্তবে এটা উল্টো । সূতরাং চাকরি পেতে শুধু সুপারিশ লাগে এটা ভ্রান্ত ধারণা ।
চাকরি পেতে ভালো ফলাফলই যথেষ্ট
চাকরি পেতে ভালো ফলাফল ই যথেষ্ট নয় । অনেক শিক্ষার্থী মনে করে পড়ি আর না পড়ি রেজাল্ট ভালো হলেই হবে তাহলে ভালো সম্মান জনক চাকরি ও পেয়ে যাবো । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । কিন্তু বর্তমানে চাকরির বাজার শুধু রেজাল্ট মূল্যায়ন করে না । কেনোই বা রেজাল্ট কে মূল্যায়ন করবে কারণ এই ডিজিটাল পৃথিবী চাই আপনার স্কিল । মেধা ভালো ফলাফল স্কিল সব মিলেই থাকতে হবে । চাকরি পাওয়ার জন্য রেজাল্ট এর পাশাপাশি থাকতে হবে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল কেমন আপনার বুদ্ধিমত্তা কি রকম আপনি কঠিন পরিশ্রমী মানুষ কিনা সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আছে কিনা । সব মিলেই আপনাকে তারা যাচাই করবে । অতএব চাকরি পেতে হলে শুধু ভালো ফলাফল ই যথেষ্ট হবে না । আপনার দক্ষতা অভিজ্ঞতাই হবে আপনার চাকরি পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম
বিদেশে চাকরি পেলেই জীবন সেট হয়ে যাবে
অনেক মানুষের মনের ভাবনা হচ্ছে বিদেশে চাকরি পেলেই জীবন শেষ হয়ে যাবে । শুধু টাকা আর টাকা জীবনে কোন চিন্তা নাই । কিন্তু বাস্তবে বিদেশে চাকরি করার কি এতই সহজ টাকা কি গাছের পাতা যে ধরল আর হাতে নিল । বিদেশে গিয়ে চাকরি করা এত সহজ না ।বিদেশে চাকরি পেলে অনেক বাধা সম্মুখীন হতে হবে । প্রথম বাধা হচ্ছে ভাষার বাধা, সাংস্কৃতির পরিবর্তন বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর বিদেশের সংস্কৃতি কখনোই এক হবে না ।
কঠোর পরিশ্রম থানা কোর্ট কাছারি বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে । তবে বিদেশে ভালো সুযোগ পাওয়ার জন্য দক্ষতা লাগবে ভাষা জ্ঞান এগুলো অনেক জরুরি । সুতরাং বিদেশে চাকরি পেলেই যে জীবন শেষ হয়ে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছু না ।
চাকরি মানে শুধু মাসিক বেতন পাওয়া
আমরা অনেকে মনে করি যে চাকরি মানে শুধু মাসিক বা মাসে মাসে বেতন পাওয়াকেই বোঝায় । এটা একদমই ভ্রান্ত ধারণা । চাকরি মানে শুধু মার্চ মাসে বেতন পাওয়াই নয় বরং চাকরি মানে হচ্ছে একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার উন্নতি করার একটি মাধ্যম । যার ফলে সে বাঁচবে এবং তার পরিবারকে বাঁচাতে পারে । একটি চাকরি হলে সেটা তো আর বাসার পাশে হবে না সেটা হবে অঞ্চল ভেদে তাই চাকরিজীবীর অভিজ্ঞতা বাড়বে দক্ষতা বাড়বে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়বে নতুন নতুন মানুষের সাথে ওঠাবসা করবে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি হবে । বিভিন্ন দিকে নেটওয়ার্ক তৈরি হবে যেইটা ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য অনেক সহায়তা করবে । তাই চাকরিকে শুধু মাসিক বেতনের বেতন না ভেবে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যারিয়ারের পথ হিসাবে ভাবা উচিত ।
চাকরি করার পর পড়াশোনার দরকার হয় না
কিছু মানুষের মুখে শোনা যায় চাকরি করার পর পড়াশোনার দরকার হয় না আরো শোনা যায় যারা চাকরিপ্রার্থী তারাও বলে কষ্ট করে একটু পড়েই চাকরিটা হয়ে গেলে আর পড়তে হবে না । চাকরি প্রার্থীরা যখন চাকরি পায় তখন মনে করে যে নতুন করে আর কি জানার আছে । কিন্তু বাস্তবে চাকরির পাশাপাশি শিক্ষা অর্জন খুবই জরুরী একজন চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে । বর্তমানে এই যুগে সবকিছুই আপডেট হচ্ছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকেও শিক্ষা অর্জন করে সেই সাথে সাথে এগোতে হবে । একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যায় একটি পদে যখন চাকরি হয় আপনি কি সেই পদে সারা জীবন থাকতে চান নাকি প্রমোশন পাইতে চান পদোন্নতি পাইতে চান যদি পদোন্নতি পাইতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার অভিজ্ঞতা দক্ষতা এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই আপনাকে প্রমোশন পাইতে হবে ।
বেসরকারি চাকরিতে কোনো নিরাপত্তা নেই
আমরা অধিকাংশ মানুষই যে বিষয়টা ভেবে থাকে সেটা হচ্ছে বেসরকারি চাকরিতে কোন ধরনের নিরাপত্তা নেই । এটা অধিকাংশ মানুষই মনে করেন । মনে করেন সরকারি চাকরি ভালো বোনাস আছে সুযোগ সুবিধা আছে যেটা বেসরকারি চাকরিতে নেই । এই ধারণাটা একটি ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করা হচ্ছে । কারণ হাতেগনা কিছু কোম্পানি এই ধরনের হয়ে থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানি কর্মীদের বা কর্মকর্তাদের অনেক ভালো বেতন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে যেটা সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা থেকেও অনেক বেশি হয়ে থাকে । সুতরাং সব ধরনের বেসরকারি চাকরিতে যে নিরাপত্তা নেই এটা না বেসরকারি চাকরিতেও নিরাপত্তা আছে ।
চাকরি না করলে জীবনে সফল হওয়া যায় না
আমাদের এই সমাজে ভ্রান্ত ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম ধারণা হচ্ছে চাকরি না করলে জীবনে সফল হওয়া যায় না একটি সরকারি চাকরি সফলতার মূল চাবিকাঠি চাকরিকেই আমরা সফলতার একমাত্র দিই হিসেবে ধরে নি এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা এতে কোন সন্দেহ নেই । আপনি খেয়াল করলে দেখবেন বড় বড় উদ্যোক্তা দেশে খ্যাত নামকরা ব্যক্তিরা কখনো চাকরি করেন নি তাহলে কি তারা সফল নয় । শুধু চাকরি নয় সফল হওয়ার জন্য অনেক ধরনের পথ রয়েছে ।
আপনি ব্যবসা করতে পারেন যেটার ইনকাম হবে সীমিত না অসীম । আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন অনেক ডলার ইনকাম করা সম্ভব আপনি উদ্যোক্ত হইতে পারেন অনলাইন ক্যারিয়ারের মাধ্যমেও সফলতা অর্জন করা সম্ভব । তাই চাকরি একমাত্র জীবনের সফলতা এনে দিবে এই ধারণাটা একবারেই ভুল ।
পরিশেষে কিছু কথা
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই আমাদের সমাজে চাকরি নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে । এই ধারণার মাধ্যমে আমাদের মন মানসিকতা ভুল দিকে পরিচালিত হয় । চাকরি মানে শুধু বেতন পাওয়া নয় । চাকরি মানে একটু অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি ধাপ । তাই চাকরি নিয়ে এই ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূরের ছুরি দিয়ে আমরা বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে চলতে শিখি । সঠিক দিকনির্দেশনা পর্যাপ্ত অনুশীলন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব । আপনি যদি আমার এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে থাকেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আপনার মতামত অত্যন্ত মূল্যবান আপনি আপনার মতামত জানাইতে ভুলবেন না ।

আপডেট ধারার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url