নতুন মোবাইল কিনার গাইডলাইন – ভালো মোবাইল চেনার উপায়
আজকের ব্লগে নতুন মোবাইল কিনার গাইডলাইন আপনাকে দিবে আপনার জন্য ভালো মোবাইল
কিনার সঠিক গাইডলাইন । এই পোস্ট এর মূল কারন এটায় যেন আপনি আপনার রক্ত ঘামানো
টাকা দিয়ে এমন মোবাইল কিনবেন যাতে আপনার টাকা টা জলে ভেসে না যায়
বর্তমানে মোবাইল আমাদের জিবনের সাথে অতিপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে ।এই অবস্থায় মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্তও চলা আমাদের জন্য সম্ভব না । যোগাযোগ,
শিক্ষা, তথ্য আদান প্রদান,ব্যবসা বাণিজ্য, বিনোদন, ছবি তোলা, টাকা লেনদেন
ইত্যাদি সব কিছুর জন্য প্রয়োজন । কিন্তু কথা হলো এত এত মোবাইল কোম্পানি এত এত
ব্র্যান্ড । এগুলোর মাঝখানে থেকে কিভাবে আপনার জন্য ভালো মোবাইল কিভাবে কিনবেন
চলুন বিস্তারিত জেনে নি ।
পেজ সূচিপত্রঃ নতুন মোবাইল কিনার গাইডলাইন – ভালো মোবাইল চেনার উপায়
- বাজেট নির্ধারণ করুন
- প্রয়োজন অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন বাছাই
- প্রসেসর ও র্যামের দিকে নজর দিন
- স্টোরেজ ক্ষমতা যাচাই করুন
- ব্যাটারি ও চার্জিং সাপোর্ট দেখুন
- ডিসপ্লে কোয়ালিটি যাচাই করুন
- ক্যামেরা পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুন
- নেটওয়ার্ক ও কানেক্টিভিটি
- ব্র্যান্ড ও সার্ভিস সেন্টার
- রিভিউ ও ইউজার ফিডব্যাক দেখুন
- পরিশেষে আমার মতামত
বাজেট নির্ধারণ করুন
নতুন মোবাইল কিনার আগে আপনাকে আপনার বাজেট নির্ধারণ করতে হবে । বাজেটের উপর
নির্ভর করেই আমরা ভালো মোবাইল নির্বাচন করতে পারবো । এতে করে আপনি সহজেই
সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন । বাজেট নির্ধারণ আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারন
বলি বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত হওয়ায় মিডরেঞ্জ মোবাইলের দিকে বেশি
ঝুকে পড়ে এ ছাড়া তো উপায় ও নাই । দোকানদার আপনাকে তার মতো করে
বুঝাবে কারন তাকে সেল করতে হবে । তার কথা শুনে আপনি আওলায়ে যাবেন তখন তার কথায়
মগ্ধ হয়ে মোবাইল টি কিনে ফেলবেন । এতে আপনার দুইটি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
প্রথমত – আপনার অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে । দ্বিতিয়ত – বেশি টাকা দিয়ে
খারাপ মোবাইল কিনে ফেলবেন । তাই বাজেট নির্ধারণ করুন ।
প্রয়োজন অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন বাছাই
নতুন মোবাইল কিনার আগে আপনাকে অবশ্যয় স্পেসিফিকেশন বাছাই করতে হবে তাহলেই আপনি ভালো মোবাইল কিনতে পারবেন ।এখন আপনাকে ভাবতে হবে আপনি কেন নতুন মোবাইল কিনতে। চান অনেকে অনেক ধরনের প্রয়োজনে মোবাইল কিনে এমন ও আছে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি উঠানোর জন্য কেউ মোবাইল কিনে গেমিং মোবাইল ও খুঁজেন অনেকে ।সে জন্য আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কেন নিতে চাচ্ছেন কোনটি আপনি ব্যাবহার করতে চান আপনি যদি গেমের জন্য নিতে চান তাহলে ভালো প্রসেসর লাগবে। ভালো র্যাম দরকার হবে আপনার । ছবি তোলার জন্য দেখে নিতে হবে ভালো ক্যামেরা কোনটা এবং স্ট্যাবিলাইজেশন অনেক জরুরি । সে জন্য আপনাকে স্পেসিফিকেশন বাছাই করতেই হবে
প্রসেসর ও র্যামের দিকে নজর দিন
ভালো মোবাইলের প্রধান বৈশিষ্ট পারফরম্যান্স এবং মোবাইলের গতি । এগুলা তখনই ভালো
ফিটব্যাক দিবে যখন আপনি প্রসেসর এবং র্যাম এর দিকে নজর দিবেন ।আমি ধরে নিলাম
আপনি নতুন মোবাইল কিনতে চান গেমের জন্য তাহলে অবশ্যয় আপনাকে র্যামের দিকে নজর
দিতে হবে । গেমিং এর জন্য কিনুন বা মাল্টিটাস্কিং এর জন্য কিনুন তাহলে
অবশ্যয় আপানাকে র্যাম দেখে নিতে হবে । বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি র্যামের
ক্ষেত্রে ৬ জিবি থেকে শুরু করতে পারেন ৮ জিবি বা ১২ জিবি হলে আরো ভালো
পারফরমান্স পাবেন ।আর প্রসেসরের ক্ষেত্রে মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি, স্ন্যাপড্রাগন, এক্সিনোস, ইউনিসোক টি ইত্যাদি প্রসেসরের মধ্যে দেখতে পারেন । র্যাম এবং প্রসেসর
যদি ভালো না হয় তাহলে আপনার ফোন হ্যাং করবে । ধীরে ধীরে মোবাইল টা স্লো হয়ে
যাবে । তাই আপনার উচিত হবে প্রসেসর ও র্যামের দিকে নজর দেওয়া ।
স্টোরেজ ক্ষমতা যাচাই করুন
ভালো মোবাইল কিনার পাশাপাশি অবশ্যয় যেই জিনিস টা যাচাই করতে হবে সেটা হলো
মোবাইলের স্টোরেজ ক্ষমতা । স্টোরেজের দিকে অবশ্যয় নজর দেওয়া উচিত । কারন আপনি
যদি ছবি প্রিয় হয়ে থাকেন অথবা আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হবেন ভাবছেন তাহলে
স্টোরেজ কম হলে আপনার জন্য অসুবিধা হবে । কন্টেন্ট ক্রিয়েট করতে প্রচুর ভিডিও
প্রয়োজন পড়বে আপনার । আপনার মিনিমাম স্টোরেজ ৬৪ জিবি হওয়া উচিৎ তবে ১২৮ অথবা
২৫৬ জিবি অথবা ৫১২ জিবি হলে আরো বেশি সুবিধা আপনার জন্য । আপনি যদি মনে করেন যে
না আমি ৬৪ জিবি নিবো কিন্তু এর পাশাপাশি মেমোরি কার্ড ব্যাবহার করবো সেটাও করতে
পারেন যদি আপনার বাজেট কম হয় । তবে একটি ঝামেলা পোহাতে হতে পারে মেমোরি কার্ড
আপনার মোবাইলকে ধীর গতি করে দিতে পারে ।
ব্যাটারি ও চার্জিং সাপোর্ট দেখুন
ভালো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেই বিষয় টা খেয়াল রাখতে হবে সেটা ব্যাটারি
ও চার্জিং সাপোর্ট । বর্তমানে প্রত্যেকটি মোবাইলের ডিসপ্লে অনেক বড় তাই
ব্যাটারি শেষ ও হবে । বড় ডিসপ্লের জন্য ব্যাটারি ও বড় হওয়া উচিৎ । ভালো গুনগত
মোবাইলের জন্য ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব ই গুরুত্বপূর্ণ । বর্তমান পরিস্থিতে আপনার
ব্যাটারি মিনিমাম ৫০০০mah হওয়া উচিৎ । তাহলে সারাদিন ভালো ভাবেই কেটে যাবে ।
আরো পড়ুনঃ এক চার্জে দীর্ঘ সময় ব্যবহারযোগ্য ফোন
আপনি যদি বেশিরভাগ বাহিরেই থাকেন তাহলে ফাস্ট চার্জিং আপনার জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । ফাস্ট চার্জিং হলে খুব দ্রত আপনার চার্জ
ফুল হয়ে যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না । সেজন্য ভালো মোবাইল কিনার
ক্ষেত্রে অবশ্যয় ব্যাটারি ও চার্জিং সাপোর্ট এর দিকে নজর দেওয়া উচিৎ
।
ডিসপ্লে কোয়ালিটি যাচাই করুন
আপনি তো ভালো মোবাইল কিনতে চান তাইনা সেজন্য আপনাকে অবশ্যই প্রথমে ডিসপ্লে
কোয়ালিটি চেক করতে হবে । ডিসপ্লে কোয়ালিটি ভালো না হলে আপনি ফোন চালিয়ে মজা
পাবেন না । প্রথমেই স্ক্রিনে কোন দাগ আছে কিনা দেখুন । স্ক্রিন ভালো না হলে
ব্যবহার করতে বিরক্ত লাগতে পারে । ভিডিও দেখা বা গেম খেলার জন্য ফুল
এইচডি প্লাস রেজুলেশন হলে ছবি স্পষ্ট দেখা যায় এবং ডিসপ্লের রং সুন্দর এবং
চোখে আরাম দেয় । টাচ রেসপন্স দ্রুত হলে কাজ করা আরো সহজ হয় দোকানে গিয়ে
সরাসরি স্ক্রিনে ভিডিও চালিয়ে দেখে নিন
ক্যামেরা পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুন
ভালো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে ক্যামেরা পারফরম্যান্স পরীক্ষা করুন । যেহেতু আপনি
ছবি প্রিয় মানুষ আপনি ছবি তুলতে ভালোবাসেন । আবার আপনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
তাহলে এই পয়েন্ট টা আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি । আপনি যখন
মোবাইল কিনতে যাবেন তখন সেখানেই ক্যামেরা ওপেন করুন ছবি তুলুন । কম আলোতে কেমন
ছবি আসে বেশি আলোতে কেমন ছবি আসে খেয়াল করুন । শুধু মেগাপিক্সেল বেশি হলে
ক্যামেরা ভালো হবে এমন টি নয় । সেন্সরের মান, অ্যাপারচার,নাইট মোড,
স্ট্যাবিলাইজেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যেহেতু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অবশ্যয়
ভিডিও কোয়ালিটি চেক করুন । মাইক্রোফোন চেক করুন আশা করি এই নিয়মগুলো মেনে চললে
আপনি আপনার জন্য সঠিক মোবাইল নির্বাচন করতে পারবেন ।
নেটওয়ার্ক ও কানেক্টিভিটি
ভালো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে মোবাইলের নেটওয়ার্ক এবং কানেক্টিভিটি অবশ্যই
শক্তিশালী হওয়া উচিত । নেটওয়ার্ক ও কানেক্টিভিটি মানে হলো এক ডিভাইস
থেকে আরেক ডিভাইসে তথ্য পাঠানো বা নেওয়ার ব্যবস্থা । নেটওয়ার্ক হলো ডিভাইস
গুলোর মধ্যে সংযোগ আর আরেকটিভিটি হল সেই সংযোগের গুণগতমান । এটি তার
দিয়েও হতে পারে আবার তার ছাড়াও হইতে পারে । উদাহরণ ইন্টারনেট, ওয়াইফাই ও
ল্যান । ভালো ব্যান্ডউইথ ও স্পিড থাকলে নেটওয়ার্ক ভালো হবে কাজ করে আনন্দ
পাওয়া যাবে । কানেক্টিভিটি খারাপ হলে তথ্য আদান প্রদানের সমস্যা হয় । এখন ৩জি ৪জি ৫জি নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি আরো ফাস্ট করছে । তাই নেটওয়ার্ক ও
কানেক্টিভিটি টা যাচাই করে নিতে হবে ।
ব্র্যান্ড ও সার্ভিস সেন্টার
ভালো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যান্ডের মোবাইল কিনা যাবে না
। সেগুলো ব্র্যান্ডই নিতে হবে যেগুলা বিশ্ব পরিচিত ব্যান্ড
। ব্র্যান্ডের পাশাপাশি আপনাকে যে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে যে
একটি ডিভাইস যে কোন সময় সমস্যা হতে পারে টেকনিক্যাল প্রবলেম হইতে পারে সেহেতু
দেখতে হবে যে যেখান থেকে নিবেন বা সেই এলাকাতে সার্ভিস সেন্টার আছে কিনা এটা
যাচাই করতে হবে । দামে কম বলে যে আপনি অচেনা ব্র্যান্ডের মোবাইল কিনবেন
তাহলে কিন্তু হবে না । আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে
যে যে ব্র্যান্ড আপনি কিনতেছেন সেটার ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি পলিসিটা কি এটা
আপনার জেনে নিতে হবে অবশ্যই ।
রিভিউ ও ইউজার ফিডব্যাক দেখুন
আপনি একটি ভাল মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু হতে পারে যে আপনি এসবের কোন কিছুই
আপনার জানা নাই । সে ক্ষেত্রে আপনি একটা কাজ করতে পারেন সেটা হচ্ছে ইন্টারনেটে
অসংখ্য টেক রিভিউ ভিডিও রয়েছে । অনেকে সেই মোবাইলের ভিডিও করবে
তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে এটা দেখার পর আপনার অভিজ্ঞতা আরেকটু বাড়বে
। এতে করে ফোনের আসল পারফরম্যান্স ব্যাটারি ব্যাকআপ ও সমস্যা আগে থেকেই
জানা যাবে । আপনি চাইলে আপনার বন্ধুদের পরামর্শ নিতে পারেন তারা যদি সেই
ফোনটি ব্যবহার করে থাকে আপনি হাতে নিয়ে অনেক কিছু অভিজ্ঞতা নিতে
পারেন। তারপর আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে এই, মোবাইলটি আপনার
জন্য কিনা ঠিক হবে নাকি হবে না আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন ।
পরিশেষে আমার মতামতঃ নতুন মোবাইল কিনার গাইডলাইন – ভালো মোবাইল চেনার উপায়
পরিশেষে আমার কাছে মনে হয় মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা
অবলম্বন করতে হবে । একটি মোবাইল কিনবেন যেন দীর্ঘদিন ধরে চালাইতে পারেন এমন না
যে একদিন দুইদিন পর আবার কিনবেন । আপনি তাড়াহুড়া না করে ভেবে চিন্তে
তারপর আপনাকে নিতে হবে । অবশ্যই আপনাকে দেখেশুনে মোবাইল কিনতে হবে
বর্তমানে আমরা মোবাইল ছাড়া অচল বললেই চলে । আপনার মতামত জানাইতে ভুলবেন
না এবং ব্লকটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন ।
আরো পড়ুনঃ আপডেট ধারা হোমপেজে যেতে এখানে ক্লিক করুন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url