সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
পেজ সূচিপত্রঃ সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
- সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
- অনুদান দেওয়া কারণ
- কারা এই টাকা পাওয়ার যোগ্য?
- আপনি কোথায় যোগাযোগ করবেন
- অনুদান পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
- কিভাবে টাকা দেওয়া হয়?
- আপনার কি কি কাগজ পত্র লাগবে?
- অনেকেই টাকা না পাওয়ার কারণ
- প্রতারক চক্র থেকে সাবধান
- অনুদানের টাকা দিয়ে যা করবেন
- অনুদান পেতে করনিয়
- শেষকথাঃ সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
এই টাকাটা আমার আপনার কাছে ছোট মনে হতে পারে, কিন্তু যাদের হাতে কিছুই নেই, তাদের জন্য এই অনুদান সত্যিই অনেক বড় সহায়তা। আমাদের এক গ্রামে রহিম নামের এক দিনমজুর চাচা কাজের মাধ্যমে তার সংসার চালাইতেন। এভাবেই চলতেছিলো কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলো। পরিবারে করুন অবস্থা। ঠিক তখন সরকার থেকে ২৫০০ টাকার অনুদান পান, সেই জন্য কয়েকদিনের খাবারের চিন্তা থেকে মুক্তি পান।
আবার কোনো গ্রামীণ মহিলা এই টাকা দিয়ে হয়তো ছোট একটি হাঁস-মুরগির ব্যবসা শুরু করলেন। তাই ২৫০০ টাকার অনুদান শুধু টাকা নয়, অনেকের কাছে এটি বাঁচার নতুন আশার আলো। আমি সেই পরিবারের কথা গুলো চিন্তা করে এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কীভাবে এই অনুদান পাওয়া যায়, কী কী নিয়ম মানতে হয় এবং কোথায় যোগাযোগ করতে হয় যার ফলে আপনি অনুদান পাবেন।
অনুদান দেওয়া কারণ
সরকার সাধারণত এ ধরনের অনুদান দেয় দরিদ্র, দিনমজুর, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য। যেমন করোনার সময়, বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক পরিবার কাজ হারিয়েছিল। তখন এই টাকা দিয়ে তাদের অন্তত কিছুদিনের খাবার বা ওষুধের ব্যবস্থা হয়েছিল। যেকোনো সময় পরিবারের কর্তা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে সেই সময় সরকার থেকে যদি এরকম দেওয়া হয় তাহলে সেই পরিবার উপকৃত হয়। উদাহরণঃ আমার পাশের গ্রামের একজন ভ্যানচালক, বন্যায় ভ্যান ডুবে যায়। তখন তিনি এই ২৫০০ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন, যা দিয়ে পরিবারের জন্য চাল ডাল কিনেছিলেন। সাময়িক ভাবে কিছু দিনের জন্য শান্তি পেয়েছিলেন।
কারা এই টাকা পাওয়ার যোগ্য?
অনেকেই বলেন সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো? কিন্তু সবার জন্য এই টাকা নয়। যারা এই টাকা পাওয়ার যোগ্য
- জমি নাই বা খুব কম জমি আছে
- দিনমজুর, কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক
- অসহায় নারী (বিধবা বা স্বামীহারা)
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার
যেমনঃ আমার পরিচিত এক বিধবা নারী আছেন। তাঁর কোনো উপার্জনের উৎস নেই। স্থানীয় চেয়ারম্যানের তালিকায় তাঁর নাম ওঠে এবং তিনি অনুদান পান।
আপনি কোথায় যোগাযোগ করবেন?
অনুদান পাওয়ার প্রক্রিয়া কী?
- ইউনিয়ন পরিষদে/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে তালিকা তৈরি হয়।
- তালিকা উপজেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়।
- যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্যদের নাম অনুমোদিত হয়।
- মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়।
আমার এক বন্ধুর মামা, তিনি মোবাইলে বিকাশে টাকা পেয়েছিলেন। তাকে শুধু এনআইডি নম্বর দিয়ে তালিকায় নাম তুলতে হয়েছিল।
কিভাবে টাকা দেওয়া হয়?
বর্তমানে সরকারের বেশিরভাগ অনুদান টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
- কারো বিকাশ নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হলে টাকা সরাসরি সেই বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
- এতে টাকা নিরাপদ থাকে এবং হাতে হাতে নেওয়ার ঝামেলা কমে যায়।
অনেক সময় সরকারের শর্ত অনুযায়ী সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হয়। বিশেষ করে কৃষক, বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের অনুদান সরাসরি ব্যাংকেই পাঠানো হয়। কিছু এলাকায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে নগদ টাকা তুলে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে এটা অনেক কম হয়ে এসেছে। যদি বিশেষ কোনো জরুরি পরিস্থিতি হয় যেমন বন্যা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ তখন সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা অফিস থেকে হাতে হাতে নগদ টাকা দেওয়া হয়কুমিল্লার রিনা খাতুন নামের এক গৃহিণী সরকারি ২৫০০ টাকার অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। ফর্মে তিনি তার নগদ অ্যাকাউন্টের নম্বর দিয়েছিলেন। কয়েকদিন পর সমাজসেবা অফিস থেকে মেসেজ এলো আপনার ২৫০০ টাকা অনুদান সফলভাবে নগদ অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। রিনা খাতুন কাছের এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে টাকা তুলে নিলেন।
আপনার কি কি কাগজ পত্র লাগবে?
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট (বিকাশ/নগদ/রকেট)
- স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেম্বারের রেফারেন্স
এক প্রতিবেশী বলেছিলেন, তিনি প্রথমে শুধু নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে এনআইডি না থাকায় সমস্যায় পড়েন। তাই এনআইডি আগে থেকেই রাখা খুব জরুরি।
অনেকেই টাকা না পাওয়ার কারণ
- আবেদন ফর্মে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে না দিলে আবেদন বাতিল হয়ে যায়।কারো নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা মোঃ কামাল হোসেন কিন্তু ফর্মে লিখেছে কামালএতে মিল না থাকায় টাকা যায় না।
- অনুদান মূলত দরিদ্র, অসহায় বা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য। যাদের অন্য আয় আছে, সরকারি চাকরি আছে বা ভাতা পাচ্ছেন, তাদের আবেদন অনেক সময় বাতিল হয়।
- অনেকে একাধিকবার আবেদন করেন বা একই এনআইডি দিয়ে বারবার চেষ্টা করেন। এতে আবেদন বাতিল হয়।
- টাকা পাঠানোর জন্য সঠিক বিকাশ/নগদ/রকেট নম্বর দিতে হয়। নম্বর ভুল হলে টাকা যায় না।
- অনেকেই দরিদ্রতার প্রমাণ, ইউনিয়ন পরিষদের সুপারিশপত্র বা অন্যান্য কাগজ জমা দেন না। ফলে তাদের আবেদন গ্রহণ হয় না।
- অনুদান সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকেই দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ বা সমাজসেবা অফিস একটি তালিকা তৈরি করে। তালিকায় নাম না থাকলে টাকা পাওয়া যায় না।
- কখনও কখনও সার্ভার ডাউন, মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে সমস্যা বা সরকারি ডাটাবেসে ত্রুটির কারণে টাকা বিলম্বিত হয় বা যায় না।
ফরিদপুরের আব্দুল্লাহ মিয়া ২৫০০ টাকার অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার মোবাইল নম্বরের শেষ ডিজিট ভুল লিখেছিলেন। ফলে টাকা পাঠানো হলেও সেটি অন্য কারও নম্বরে চলে যায়। আবার কুষ্টিয়ার একজন মহিলা আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তার স্বামী ইতিমধ্যে অন্য একটি সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। এজন্য তার আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
প্রতারক চক্র থেকে সাবধান
এদিকে কিছু প্রতারক চক্র কাজ করছে যারা বলে আমরা অনুদান পেতে সাহায্য করব, প্রথমে কিছু টাকা দিন। মনে রাখবেন, সরকার কখনও এভাবে আপনার কাছ থেকে টাকা চায় না। যারা টাকা নেয়, তারা শুধুই প্রতারক। অনেক সময় কিছু ভুয়া লোক ফোন করে বলে আমরা সরকার থেকে বলছি, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হলে আগে ২০০ টাকা ফি লাগবে।" এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। গ্রামের একজন বয়স্ক মানুষ এরকম প্রতারণায় পড়ে টাকা হারিয়েছিলেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সবাইকে সতর্ক করা হয়। সরকার কোনো ফি নেয় না। তাই আপনি অনুদানের জন্য শুধুমাত্র সরকারি অফিস বা নির্দিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করুন।
অনুদানের টাকা দিয়ে যা করবেন
আপনার ঘরের খাবার, বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিলের মতো দৈনন্দিন খরচের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। ২৫০০ টাকায় অনেকটা চাপ কমানো যায়।যদি কোনো শিশুর স্কুল বা কলেজের খরচ হয়, বই, কপি বা ব্যাগের জন্য টাকা ব্যবহার করা যায়। ছোটখাটো শিক্ষার জন্য এটি অনেক সাহায্য করবে।প্রতিবেশী বা দরিদ্রদের জন্য সামান্য সাহায্য হিসেবে দিতে পারেন। উদাহরণঃ ২৫০০ টাকার মধ্যে কিছু খাওয়ার জিনিস কিনে দাতা হিসেবে সাহায্য করা।
টাকার একটি অংশ ব্যাঙ্কে রেখে ভবিষ্যতের জরুরি খরচের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন। এতে হঠাৎ কোনো সমস্যার সময় কাজের সুবিধা হবে। ২৫০০ টাকায় ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করা যায়, যেমন লিমনেড বিক্রি, হ্যান্ডমেড আইটেম বানিয়ে বিক্রি বা মোবাইল রিচার্জ/পেমেন্ট সার্ভিস শুরু করা।আমার এক প্রতিবেশী এই টাকা দিয়ে ছেলের স্কুল ফি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যদি এই টাকা না পেতাম, আমার ছেলে হয়তো পরীক্ষা দিতে পারত না।
অনুদান পেতে করনিয়
সরকার সবসময় এই ধরনের অনুদান দেয় না। তবে দুর্যোগ, সংকট বা বিশেষ পরিস্থিতিতে আবারও দেওয়া হয় তাই
- নিজের এনআইডি সবসময় ঠিক আছে কিনা দেখে নিন।
- মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু রাখুন।
- ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার খবরাখবর রাখুন।
যারা সচেতন থাকে তারাই আগে অনুদান পায়।
শেষকথাঃ সরকারি অনুদান ২৫০০ টাকা কিভাবে পাবো?
সরকারি ২৫০০ টাকা অনুদান আসলে অসহায় মানুষের জন্য বড় সহায়তা। অনেকেই মনে করেন এটা হয়তো ছোট অংকের টাকা, কিন্তু যাদের কিছুই নেই, তাদের জন্য এই টাকা অনেক মূল্যবান। তাই যদি আপনি যোগ্য হন সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করুন। আর যদি আপনার চারপাশে কোনো অসহায় মানুষ থাকে তবে তাকেও এ বিষয়ে সাহায্য করুন।এই পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে অনেকে জানতে পারে। আর আপনার যদি এই বিষয়ে কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।



আপডেট ধারার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url