পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

একজন ছেলে বা মেয়ে যখন প্রতিদিন পর্নোগ্রাফি দেখে এক ধরনের আসক্ত হয়ে পড়ে তখন পর্নোগ্রাফির বিকৃত দৃশ্যগুলোকে স্বাভাবিক মনে করে। এবং সেই বিকৃত আচরণ গুলো নিজের সঙ্গীর সাথে মিলাতে চান।
"পর্নোগ্রাফি-থেকে-মুক্তি-পাওয়ার-উপায়"
যা তার যৌন জীবনকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এখন ভাবতেছেন কিভাবে এই পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায় কি? বাঁচার উপায় নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল। তাহলে চলুন জানি পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলো সম্পর্কে 

পেজ সূচিপত্রঃ পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে আজকে কথা বলব। একজন মানুষ যখন পর্ন দেখে তখন তার ব্রেইনে নিউরোকেমিক্যাল চেঞ্জ হয় যার ফলে মানুষের হতাশার সৃষ্টি হয়, বিষণ্ণতা ইত্যাদি অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। আজ আমি আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে আপনি পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রথমে আপনাকে আপনার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি পর্নোগ্রাফি থেকে বাঁচতে চান কিনা? যদি এই আসক্ত থেকে বাঁচতে চান তাহলে নিচের ধাপগুলো মেনে চলুন। 

  • ডিভাইস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন হতে পারে আপনার কাছে একটি মোবাইল থাকতে পারে আবার একটি ল্যাপটপ থাকতে পারে আইপ্যাড থাকতে পারে যাই থাকুক না কেন যেই জায়গাগুলো থেকে পর্ন দেখার সুযোগ তৈরি হয় সেই ডিভাইস গুলো থেকে প্রথমে আপনি দূরে থাকুন। কারণ আপনি যেহেতু আসক্ত হয়ে গিয়েছেন সেহেতু আপনি চাইলেই হুট করেই এই আসক্ত থেকে বাঁচতে পারবেন না। যদি ডিভাইসগুলোকে কাছে রাখেন তাহলে যে কোন ভাবে আপনি আবার সেই ভিডিও গুলো দেখবেন এজন্য শুরুতে আপনাকে ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • ব্রেনকে বিভিন্নভাবে আনন্দ দিন আপনি পর্ন দেখে অনেক আনন্দ পেতেন। পর্ণ দেখে ব্রেনে ডোপামিন নিঃসরণ হয়।  এই আনন্দটাকে বিভিন্ন ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি বিভিন্নভাবে আপনার ব্রেন কে আনন্দ দিতে পারেন। পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন পছন্দের খেলা গুলো খেলতে পারেন ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিতে পারেন। আপনার পছন্দের খাবার রান্না করতে পারেন। এক কথায় আপনার ডিভাইস ছাড়া যেই কাজ গুলো করে আপনি আনন্দ পাবেন সেগুলো করুন এভাবেও আপনি ডোপামিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন।    
  • আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন পর্নোগ্রাফি দেখে দেখে ব্রেন ধীরে ধীরে আশপাশের মানুষ গুলোকেও সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা শুরু করে। পর্ন পর্নোগ্রাফি আসক্ত মানুষের চোখে মানুষদেরকে মানুষ হিসেবে না দেখে কেবলমাত্র যৌন আকর্ষণের উৎস হিসেবে ভাবতে শুরু করে। পর্নোগ্রাফিতে যতটা আকর্ষণীয় করা হয় বাস্তবে তার উল্টো। এ জন্য চিন্তা ভাবনা কে পরিবর্তন করতে হবে এবং মানুষদেরকে সম্মান করতে হবে মানুষদের সাথে সাধারণভাবে মিশতে হবে। পর্নোগ্রাফি আসক্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • নিজেকে ব্যস্ত রাখুন প্রতিদিন ব্যায়াম করুন যদি মনে করেন যে জিমে ব্যায়াম করবেন না তাহলে বাসায়ও করতে পারেন। আবার আপনি যে এলাকাতে থাকেন পাশের হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।পছন্দের খেলা খেল তে পারে যেমন ফুটবল ক্রিকেট যেটাতে আপনার ভালো লাগে।নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে ভবিষ্যতে কি করবেন করতে চান এগুলো নিয়ে ভাববেন তাহলে খুব সহজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন। আজকে কি করবেন তার পরিকল্পনা অবশ্যই থাকবে এবং পরের দিনে কি করবেন সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে রাখতে হবে। 
  • নিজের ধর্মীয় কাজগুলো করুন আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সালাত আদায় করবেন আল্লাহর থেকে সাহায্য চাইবেন। কুরআন পড়বেন হাদিস পড়বেন নবীদের জীবনী সম্পর্কে পড়বেন। অর্থাৎ যে ধর্মেরই আপনি হয়ে থাকবেন সেই ধর্মে যা বলা হয়েছে সেগুলোকে পালন করার চেষ্টা করবে সব ধর্মেই কোন সাইটকে মনের অশান্তিকর কারণ বলা যায়। এসব অভ্যাস ধীরে ধীরে গড়ে তুলুন। কিভাবে চেষ্টা করুন অবশ্যই আপনি এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যান। 
  • পর্ন সাইট গুলোকে ব্লক করে দিন মোবাইল প্লে স্টোর থেকে বিভিন্ন অ্যাপ ডাউনলোড করে সেই সাইটগুলোতে ব্লক করে রাখতে পারেন। যেমন BlockerX, Safe Surfer, Qustodio ইত্যাদি। যদি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই সাইটগুলোকে বন্ধ করে রাখতে পারেন। যেমন K9 Web Protection, Cold Turkey, Net Nanny ইত্যাদি।আপনি যদি ওয়াইফাই ব্যবহার করেন তাহলে রাউটারের সেটিংস এ গিয়ে DNS পরিবর্তন করে Clean Browsing Open DNS ব্যবহার করুন। এতে ঘরের সব ডিভাইস থেকে পর্ণ সাইট বন্ধ হবে।

পর্ণোগ্রাফি বলতে কি বুঝায়?

পর্নোগ্রাফি হলো এমন কোনো ছবি, ভিডিও, লেখা বা অডিও কনটেন্ট, যেটা মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগানোর জন্য তৈরি করা হয়। সাধারণত এটা অশ্লীল দৃশ্য বা শারীরিক সম্পর্কের কাজকে অতিরঞ্জিতভাবে দেখায়, যাতে দর্শক উত্তেজিত হয়। এটা মূলত বিনোদনের নামে দেখানো হলেও, বাস্তবে এর প্রভাব খুবই নেতিবাচক হতে পারে।
  • চলচ্চিত্রে পার্থক্য - যদি কোনো সিনেমায় গল্প, চরিত্র আর সামাজিক বার্তা থাকে, সেটা সিনেমা। কিন্তু যদি শুধু শরীর দেখানো আর যৌন দৃশ্য থাকে, তাহলে সেটা পর্নোগ্রাফি।
  • বাস্তব জীবনের তুলনা - দুইজন স্বামী স্ত্রী নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা ভাগ করছে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সম্পর্ককে ভিডিও করে সবার সামনে টাকা বা বিনোদনের জন্য ছড়িয়ে দেওয়া হলে সেটা পর্নোগ্রাফি।
কেন এটা সমস্যা?
  • আসল জীবনের ভালোবাসা বা সম্পর্ককে ভিন্নভাবে দেখাতে শেখায়।
  • আসক্তি তৈরি হয়, যেমন মোবাইল গেম বা ড্রাগের মতো।
  • পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, পারিবারিক সম্পর্ক সবকিছুর ক্ষতি করতে পারে।

পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত কিনা বুঝার উপায় 

অনেকেই ভাবেন পর্নোগ্রাফি শুধু মজা করার জন্য দেখা হয় কিন্তু বুঝতেই পারেন না কখন এটা আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রথমেই লক্ষণ আসে নিয়ন্ত্রণ হারানোর মধ্যে। আপনি হয়তো নিজেকে প্রতিদিন বলেন আজ আর দেখব না কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার মোবাইল বা ল্যাপটপ খুলে ফেলেন। এটা স্পষ্ট লক্ষণ যে আপনি আসক্তির দিকে চলে যাচ্ছেন।পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতিও একটি বড় চিহ্ন। অনেকেই পরীক্ষার সময় বা অফিসের কাজের মধ্যে মনোযোগ রাখতে পারেন না, বারবার মনে হয় ভিডিও দেখতে হবে। 
"পর্নোগ্রাফি-আসক্তি-থেকে-মুক্তি-পাওয়ার-উপায়-বিস্তারিত-জানুন"
আরেকটা লক্ষণ হলো একাকী সময় পেলেই দেখা। আপনি যদি ফ্রি সময়ে প্রথমেই সেই ভিডিও দেখা শুরু করেন তাহলে ভাই বুঝতে হবে এটি অভ্যাস নয় আসক্তি। এর সঙ্গে যোগ হয় অস্থিরতা যখন কয়েকদিন দেখা হয় না তখন বিরক্তি, রাগ বা মুড অফ হয়ে যায়। একজন বলছিলেন একদিন নেট না থাকলে মাথা গরম হয়ে যেত মনে হতো জীবনটা ফাঁকা।সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো বাস্তব সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া। আসল জীবনের ভালোবাসা উপভোগ করতে পারেন না, বরং সব সময় পর্দার দৃশ্যের মতো কিছু আশা করেন।


শুরুতে সাধারণ ভিডিওতে কাজ চলে কিন্তু পরে নতুন ভিন্ন ও অস্বাভাবিক ধরনের কনটেন্ট খুঁজতে থাকেন যা আসক্তির গভীর চিহ্ন। সবশেষে আসে অপরাধবোধ। অনেকেই ভিডিও দেখার পর মনে করেন এটা ঠিক করলাম না বা আল্লাহর কাছে লজ্জা লাগছে কিন্তু সেই অনুভূতিও আরেকদিন দেখা থেকে আটকাতে পারে না। এটাই প্রমাণ করে এটা আর শখ নয় বরং আসক্তি। তাহলে উপরোক্ত বিষয় যদি মিলে যায় আপনার সাথে তাহলে আপনি পুরোপুরি ভাবে পর্ণ গ্রাফি তে আসক্ত। এর ফলে ধীরে ধীরে আপনার সব কিছুই শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

পর্নোগ্রাফি কেন এতো বিপদজনক?

পর্নোগ্রাফি কেন এত বিপদজনক এটা বোঝার জন্য কল্পনা করুন একজন মানুষ প্রতিদিন অল্প অল্প করে বিষ খাচ্ছে। প্রথমে শরীরে তেমন কোনো প্রভাব বোঝা যায় না কিন্তু আস্তে আস্তে তার ভেতরের সব অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে পর্নোগ্রাফি শুরুতে হয়তো বিনোদনের মতো মনে হয় কিন্তু ভেতরে ভেতরে এটা মনের গঠনকে নষ্ট করতে থাকে।এক ছাত্র রাতে পড়াশোনা না করে বারবার মোবাইলে লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিও দেখে। সে ভাবে একটু দেখে আবার পড়ব। কিন্তু এই একটু টুকুই তার অভ্যাসে পরিণত হয়।

ফলে তার মনোযোগ ভেঙে যায় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারায়। এভাবেই ধীরে ধীরে জীবন থেকে মূল্যবান সময় হারিয়ে যায়।আরেকটা দিক হলো সম্পর্কের জগৎ। একজন যখন পর্নোগ্রাফিতে ডুবে যায় তখন বাস্তব জীবনের মানুষ আর সম্পর্ক তার কাছে ততটা আকর্ষণীয় থাকে না। সে অজান্তেই কল্পনার দুনিয়াকে বাস্তবের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে শুরু করে। যার ফলে পরিবার বন্ধু এমনকি দাম্পত্য জীবনেও দূরত্ব তৈরি হয়।

সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মনের ভেতরের শান্তি হারিয়ে যাওয়া। শুরুতে যেটা আনন্দ দেয় মনে হয় পরে সেটা অপরাধবোধ হতাশা আর একাকীত্বে পরিণত হয়। মানুষ নিজেই নিজের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে আমি ছাড়ব কিন্তু আবার দেখে ফেললাম। এই অপরাধবোধ ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়।সংক্ষেপে যদি বলতে যায় তাহলে যেইটা দাঁড়াবে পর্নোগ্রাফি ঠিক আগুনের মতো বুজতে পারছেন দূর থেকে দেখতে সুন্দর মনে হলেও কাছে গেলে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। তাই এটাকে খেলা বা মজা মনে করলে ভুল হবে।

পর্ণোগ্রাফি সাইট বন্ধ করার নিয়ম

যদি আপনি Chrome ব্যবহার করেন তাহলে এই সেটিংস গুলো করুন প্রথমে সেটিংস > Site Settings > Block Adult Sites অপশন অন করে রাখুন। Firefox ব্যবহার করলে BlockSite নামে অ্যাড অন ইনস্টল করে পর্ন সাইট লিস্ট ব্লক করতে পারবেন।অ্যাপ লেভেলে ব্লক করুন Android এ "Family Link" ব্যবহার করে যেকোনো অ্যাপ ও সাইট ব্লক করা যায়। iPhone এ Settings > Screen Time > Content & Privacy Restrictions গিয়ে Adult Websites ব্লক করে দিতে পারবেন।

কম্পিউটার এ ব্লক করুনWindows এ C:\Windows\System32\drivers\etc\hosts ফাইলে গিয়ে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্লক করা যায়। Chrome অথবা Edge এ BlockSite বা Stay Focused এক্সটেনশন ব্যবহার করুন। রাউটার লেভেলে ব্লক করুন আপনার Wi-Fi রাউটারের সেটিংসে গিয়ে blacklist অথবা parental control অপশন থেকে পর্ন সাইটগুলো এন্ট্রি দিন। এতে একই Wi-Fi তে সংযুক্ত সব ডিভাইসেই সাইটগুলো খুলবে না।

DNS পরিবর্তন করুন OpenDNS (208.67.222.123 / 208.67.220.123) ব্যবহার করলে family filter অন থাকে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্ন সাইট ব্লক হয়ে যাবে।অটো সাজেশন মুছে ফেলুন অনেক সময় সার্চ ইঞ্জিন আগের দেখা সাইট সাজেস্ট করে। তাই ব্রাউজারের history, cache, cookies নিয়মিত ক্লিয়ার করুন। এক্সট্রা সিকিউরিটি নিনযদি একা সামলানো কঠিন মনে হয় তাহলে কোনো বিশ্বস্তদের সাহায্য নিন এবং তাদেরকে ব্লকিং পাসওয়ার্ড দিন। এতে প্রলোভনেও আপনি খুলতে পারবেন না।

পর্ণ আসক্তি থেকে বাঁচার দোয়া

পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে কিছু দোয়া রয়েছে। যখন নোংরা চিন্তা বা আসক্তি আপনার ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। সূরা মুমিনুন এ আল্লাহ নিজেই কুরআনে শিখিয়েছেন হে আমার প্রতিপালক আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন তারা আমার কাছে না আসে। এই দোয়া বারবার পড়লে মনে এক ধরনের শান্তি আসে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা দুর্বল হয়ে যায়। আবার সূরা ইসরা তে আল্লাহ বলেছেন ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ। 

রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে অনেক দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো আল্লাহুম্মা তাহহির ক্বালবি ওয়া হাসসিন ফারজি, ওয়াগফিরলি জানবি অর্থাৎ হে আল্লাহ আমার হৃদয়কে পবিত্র করুন আমার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করুন এবং আমার গুনাহ মাফ করুন। এই দোয়া বিশেষভাবে পড়া যায় যখন মনে হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি। ইস্তেগফারও হলো সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বারবার পড়তে হবে আস্তাগফিরুল্লাহ রব্বি মিন কুল্লি জান্বিন ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থাৎ আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই প্রতিটি গুনাহ থেকে এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসি।


আরেকটি শক্তিশালী যিকির হলো লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই, কোনো ক্ষমতা নেই। এই যিকির পড়তে পড়তে বুঝতে পারবেন নিজের লড়াইয়ে আপনি একা নন আল্লাহর সাহায্য আপনার সাথে আছে। সবশেষে প্রতিদিন ফজরের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে সূরা ইখলাস সূরা ফালাক আর সূরা নাস পড়ে শরীর ও মনকে ঢেকে দিন। এগুলো শয়তানের ফিসফিসানি ও কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবে। আশা করি আপনি যদি এই দোয়া গুলো পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান অবশ্যয় আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবে। 

পর্ণ দুনিয়া এবং আসল দুনিয়ার পার্থক্য

পর্ণ দুনিয়া এবং আসল দুনিয়ার পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। 
  • পর্ন দুনিয়া আসলে একটা কৃত্রিম জগৎ। এখানে সব কিছু সাজানো অভিনয় করা আর অতিরঞ্জিত। ক্যামেরা ও লাইট এবং এডিটিং দিয়ে এমনভাবে দেখানো হয় যেন সেটাই আসল আনন্দ। অথচ বাস্তবে এসবের কোনো মানে নেই। যেমন ধরুন সিনেমায় নায়ক এক ঘুষিতে ১০ জনকে উড়িয়ে দিলো আমরা জানি বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। পর্নও ঠিক তেমনই বাস্তব জীবনের সাথে কোনো মিল নেই শুধু চোখ ধাঁধানো ভিজ্যুয়াল। আরেকটু সহজ করে বলি একজন পর্নে আসক্ত মানুষ ভাবে সবকিছু দ্রুত নিখুঁত আর সিনেমার মতো
  • আসল দুনিয়া হলো দায়িত্ব ভালোবাসা আর সম্মানের জায়গা। এখানে সম্পর্ক মানে হলো বোঝাপড়া, ধৈর্য, পারস্পরিক সম্মান আর মমতা। স্বামী স্ত্রী বা দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক শুধু শারীরিক ব্যাপার নয় এখানে মানসিক শান্তি আবেগের যোগাযোগ আর পরিবার গড়ার দায়িত্বও থাকে। যেইটা পর্ণ জগতের সাথে সম্পূর্ণভাবে অমিল। বাস্তবে যখন বিয়ে করে তখন সে হতাশ হয় কারণ বাস্তব সম্পর্ক পর্নের মতো চলে না। এটা ঠিক যেমন ইউটিউবে ব্লগ দেখে ভ্রমণ কল্পনা করা আর সত্যি সত্যি ট্রেনে চড়ে রাজশাহী যাওয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক আছে।

মাস্টারবেশন থেকে মুক্তির উপায়

মাস্টারবেশন এর যাত্রা  একটি কৌতুহল বা বয়সের যে শারীরিক প্রয়োজন থাকে সেখান থেকে। আপ নি প্রথমে মনে করবেন হয়ত এটি কোনো বড় সমস্যা নয় কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার নিয়ন্ত্রণ এর বাহিরে চলে যাবে এবং আপনি এক ধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়। অনেক স্টুডেন্ট আছে যারা রাতে পড়াশোনা বা কাজের বদলে মোবাইল বা ল্যাপটপে সময় কাটায় মনে করে একবার দেখেনি এরপর অফ করে কাজগুলো করবো তখনই মাস্টারবেশন করে ফেলেন। কিন্তু সেই একবার আর শেষ হতে চাইনা সময়ের সাথে সাথে অভ্যাসে পরিণত হয়।
"পর্নোগ্রাফি-আসক্তি-থেকে-মুক্তি-পাওয়ার-উপায়"
প্রথমেই আপনাকে মেনে নিতে হবে আপনি একটি সমস্যার মধ্যে রয়েছেন এটা আপনার ব্রেনকে বুঝাইতে হবে। নিজের প্রতি রাগারাগি না করে বা ধমক না দিয়ে বরং ভাবতে হবে এটি আমার নিয়ন্ত্রণ এর বাহিরে কিন্তু আমি মুক্তি চাই এই রোগ থেকে। অনেক মানুষ আছেন যারা লজ্জার কারণে নিজের বা মানুষের কাছে ভুল প্রকাশ অস্বীকার করেন কিন্তু আপনাকে জানতে হবে এটি মুক্তি পাওয়ার প্রথম ধাপ। এরপর আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাবেন এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনের দোয়া যেমন হে আমার প্রতিপালক আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। 


আরেকটি বড় উপায় আছে মাস্টারবেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার সেটা হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা। ফ্রি সময়ের অভাব আসক্তি কমায়। পড়াশোনা, হবি, ব্যায়াম বা সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখুন। যখন মন ব্যস্ত থাকবে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা আসবে না ফলে মাস্টারবেশন করার ইচ্ছা থাকবে না। একই সঙ্গে চোখ ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়া বা অশ্লীল কনটেন্ট ব্লক করুন চোখ নত রাখার চেষ্টা করুন এবং মনের মধ্যে সতর্কতা রাখুন। পরিবারের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। তারা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে। 

পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় বই

  • Your Brain on Porn Gary Wilson
  • Breaking the Cycle George N. Collins
  • Pornography Addiction Healing the Hidden Addiction Mark Laaser
  • The Porn Trap Wendy & Larry Maltz

শেষকথাঃ পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় পাওয়ার জন্য অবশ্যয় আপনাকে পর্ণ দেখার উপায়গুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করেন। পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারের উপর ফোকাস করেন। তাহলে আশা করা যায় আপনি পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন। পোস্ট টি শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেন। এই বিষয়ে যদি কোন কিছু জানার বা বলার থাকে অবশ্যয় কমেন্ট করে মতামত জানাইতে পারেন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url